ভারতীয় চলচ্চিত্র নিঃসন্দেহে এক রেঁনেসার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তার এক বলিষ্ঠ উদাহরণ বিশাল ভরদ্বাজের সদ্য মুক্তি পাওয়া ছবি 'কামিনে'। আম-আদমির গালাগাল যে সিনেমার টাইটেল হয়ে দাঁড়াতে পারে, তা বোধহয় রাজ কাপুর - গুরু দত্তেরা কস্মিনকালেও ভাবেননি। তাদের দৌড় 'চোর', 'শরাবী', 'জংলী', 'জানোয়ার'-এই সীমাবদ্ধ ছিল। বাংলাতেও হালফিলে 'চ্যালেঞ্জ নিবি না শালা' জাতীয় নাম উঠে আসছে। আগামীদিনে চার-পাঁচ অক্ষরের শব্দগুলোও যদি সিনেমার নাম হয়ে ওঠে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এতে নির্মাতার কোনো দোষ দেখা যাচ্ছে না। 'কামিয়ে নে'-র ইঁদুরদৌড়ে টিকে থাকার জন্য কামিনে জাতীয় ক্যাপ্শন অবশ্যই এক মাস্টারস্ট্রোক।
কামিনে শব্দটার ব্যুৎপত্তি নিয়ে বিশেষ আলো দেখাতে পারব না। তবে বলতে পারি শব্দটার জনপ্রিয়তার পেছনে ধর্মেন্দ্র দেওলের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কুকুররূপী কামিনেদের রক্তপানের যে লিপ্সা তিনি দেখিয়েছেন, তা আজও সারমেয়কুলে রূপকথা। অন্যান্য দ্বিতীয় শ্রেণীর শব্দকে ব্রাত্য করে নির্দেশক কেন কামিনেকে বেছে নিলেন সেটা আমি বুঝিনি। লোকে বলে একতা কাপুরের সমস্ত 'ক'-পূর্বক সিরিয়াল সফল হয়ে থাকে। বিশালজি হয়ত একতামাতার তুকতাককে অবহেলা করতে পারেননি।
সিনেমার কেন্দ্রবিন্দু দুই যমজ ভাই - চার্লি ও গুড্ডু। এই মন্দার বাজারে দুই ভাইকে যমজ বানিয়ে এক অভিনেতা দিয়ে চালিয়ে দেওয়া বেশ যুক্তিপূর্ণ। যমজ ভ্রাতৃদ্বয়ের ভূমিকায় শাহিদ কাপূর। 'আঁখো মে তেরা হি চেহ্রা'-র ক্যাবলা চকোলেট মার্কা শাহিদ আর আজকের বাইসেপ ট্রাইসেপ মোড়া শাহিদ বেশ আলাদা। অক্ষয়কুমার, সঞ্জয় দত্ত, অক্ষয় খান্নাদের গুড়ি গুড়ি করে কাটা চুল বা আধা টাকের পাশে জন আব্রাহাম, শাহিদদের ঝাঁকড়া চুল নিশ্চয়ই কিছুটা বিরক্তি দূর করে। তাছাড়া নতুন প্রজন্মের এই তারকাদের প্রকৃত অভিনয়ের প্রতি যে অনীহা, সেটাও এক বৈচিত্র। ফেরা যাক সিনেমায়। গল্প আবর্তিত হয় দুই ভাইয়ের সম্পর্ক আর তাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে। নিঃসন্দেহে নতুন কিছু নয়। তবু গল্পের পটবিন্যাস, চরিত্র রূপায়ন, সময়োচিত কামিনেপনা ও একটা সামগ্রিক বিনোদন সিনেমাটাকে আলাদা মাত্রা দিয়েছে।
চার্লি এক রেস্কোর্সের বুকি, জীবনের লক্ষ অবশ্যই শর্টকার্টে অর্থ উপার্জন। চার্লির দর্শন অনুযায়ী জীবনে দুটিই রাস্তা - শর্টকার্ট ও ছোট শর্টকার্ট। বাস্তব জীবনে আমিও খানিকটা এরকমই উপলব্ধি করেছি ... হৃদয়হরণা মেয়েদের দুটিই পোষাক - শর্টস্কার্ট ও ছোট শর্টস্কার্ট। চার্লির বস তিন বাঙালী উন্নাসিক ভাই যারায় পেশায় মাফিয়া। মেজ ভাইয়ের চরিত্রে রজতাভ দত্তের ছোট উপস্থিতি বাঙালীদের নিশ্চয়ই আনন্দ দেবে। চার্লি এক বিশেষ উচ্চারণজনিত সমস্যায় ভোগে - সে 'শ' কে 'ফ' উচ্চারণ করে। ভাগ্যিস কোনো বাঙালী এই রোগে ভোগে না। তাহলে তার জীবনে 'শাক' আর 'শার্ট' অনুচ্চারিতই থেকে যেত।
অন্য গোবেচারা ভাই গুড্ডু এক এন্জিওতে কাজ করে। তার সমস্যা তোতলামি। এন্জিওর এক ক্যাম্পেনে পতিতালয়ে নীরোধ বিলি করার সময় সে জানতে পারে যে নিজের অসুরক্ষিত সঙ্গমে পিতৃত্ব দরজায় কড়া নাড়ছে। তার প্রেয়সী (প্রিয়াঙ্কা চোপড়া) আবার 'জয় মহারাষ্ট্র' ধ্বজাধারী ভোপে ভাউর বোন। এক কোকেন স্মাগলিং এর ঘটনায় সব চরিত্র ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়ে। হিন্দি সিনেমায় অধুনা স্মাগলিং এর মাধ্যম হিসেবে বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার বেশ লক্ষণীয়। 'আঁখে' ছবিতে হারমোনিয়ামে টাকা লোকানো হয়েছিল। 'ঢোল'-এ তারা স্থান পেয়েছিল একটি ঢোলে। এবারে কোকেন পাচারের মাধ্যম ছিল একটি গীটার। গল্প যত ক্লাইম্যাক্সের দিকে গেছে, ততই আকর্ষক হয়েছে। মকবুল, ওঙ্কারার পর একটি ভিন্ন স্বাদের সিনেমা উপহার দেওয়ার জন্য বিশালজিকে ধন্যবাদ।
সিনেমার সুর বিশাল ভরদ্বাজেরই। মাচিস, সত্যা, ওঙ্কারা-র মত সুর না হলেও কিছু গান ভাল। হিন্দি গানের নতুন বিবর্তন নিঃসন্দেহে মোহিত চৌহান। সিল্ক রুটের 'ডুবা ডুবা'-র সাফল্য বেশিদিন ধরে রাখতে পারেননি। প্লেব্যাকে প্রত্যাবর্তনের পর তার সমস্ত গানই মোটামুটি সুপারহিট। এই অ্যালবামে 'পেহলি বার মোহব্বত' গানটিও অসাধারণ। গুলজারের কথা সত্বেও গানের পাঞ্চলাইনে 'ঘপাক্', 'ঢন টনান' জাতীয় শব্দের ব্যবহার একটু হতাশ করেছে।
সামগ্রিকভাবে সিনেমাটি অবশ্যই বিনোদনে সফল। পাইরেসির বিরুদ্ধে যারা, তাদের মাথায় পড়ুক বাজ - এই মতাদর্শে বিশ্বাসী হয়েও থিয়েটারে গিয়ে এই সিনেমাটি দেখায় কোনো আক্ষেপ নেই আমার। সস্তা যৌন কমেডির ভিড়ে না হেঁটে কামিনের এই প্রয়াস অবশ্যই প্রসংসনীয়।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Film review ta jotharto hoyeche mone holo, tobe tatha kothito film critic er point of view theke ...haatke. Bhalo laaglo.
ReplyDeleteJio pagla, jamiye likhechhis....
ReplyDeleteguru ki likhecho...bhalo laglo
ReplyDeleteআমি বাংলায় একটা ব্লগিং প্ল্যাটফর্ম বানিয়েছি, আপনি এখানেও লিখতে পারেন। আসুন - coffeehouseradda.com
ReplyDeleteKeya baat hae... bato me dum haeiii
ReplyDelete