নিশ্চিন্তেই ছিলাম ... NABC যাত্রাপালার এখনো একদিন বাকি। ফোর্সড্ শাটডাউনের সুখ ল্যাদ সহকারে উপভোগ করছিলাম। হঠাৎই জেগে উঠল প্রযুক্তির অন্যতম অভিশাপ - মোবাইল ফোন। হাজিরা দিতে হবে কনভেনশন সেন্টারে। NABCর দোরগোড়ায় কর্মকর্তাদের গলায় যে পরিমাণ উচ্ছ্বাস তা বোধহয় স্বাধীনতার প্রাক্কালে নেহেরুও অনুভব করেননি। কেউ যদি কোনো Startup খুলতে চান, তাদের জন্য আমার একটা আইডিয়া আছে। এমন একটা ওষুধ বার করুন যা মানুষকে NABC কর্মকর্তাদের কাছাকাছি এনার্জি লেভেলে নিয়ে যাবে। একটা নামও ঠিক করেছি - নায়াগ্রা (Ref-ভায়াগ্রা)।
পৌছে গেলাম গ্রাউন্ড জিরোতে। মকবুল ফিদা হুসেনকে যদি ক্লাউড কম্পিউটিং এর সেমিনার শোনাতে বসানো হত, তিনি হয়ত অনুভব করতে পারতেন আমার মনের অবস্থাটা। ঢোকার মুখেই সাজানো রেজিস্ট্রেশন কাউন্টার। কিছু নওজওয়ানকে দেখলাম উৎসাহভরে ওয়েলকাম কিট গোছাচ্ছে। তাদের মধ্যে এক চিনা মেয়েও আছে। বং টং শুনে সে হয়ত চিনের সাথে কোন আত্মিক সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছে। মোদ্দা কথা NABCর দখলে 'চাঁদনী চক টু চায়না'।
যে দলটার সাথে কাজ করতে হবে তারা সিনেমা দেখানো, সাহিত্য সম্মেলন জাতীয় কিছু রাজকার্য করবে বলে ভেবেছে। চন্দ্রবিন্দুর ভাষায় 'অনাবাসী ঢং'। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে থিয়েটার গুলি দেখে নেওয়ার। থিয়েটার বলতে একটি চিনা ডিভিডি প্লেয়ার, একটি সস্তার প্রোজেক্টর আর একটি সাদা থান। হয়ত বাংলা সিনেমার সাম্প্রতিক বৈধব্যের প্রতীক।
খাওয়া দাওয়া শেষে দেখা মিলল NABCর আবিষ্কার 'হিমান'-এর সাথে। এই সামান্য ব্লগে হিমানের পরিচয় দেওয়া বাতুলতা। এই মুহূর্তে তার পরিচয় বিজনেস ফোরামের সবচেয়ে ফাঁকিবাজ কর্মকর্তা। যাইহোক বিশেষ কাজে নেমে এলাম লাগোয়া হিল্টন হোটেলের লবিতে। এসে পৌছেছেন কলকাতার প্রতিভারা। কবি, গায়ক, অভিনেতাদের এই অটোগ্রাফহীন উপস্থিতি চোখ টানতে বাধ্য। এক জনপ্রিয় গায়ক-কাম-নির্দেশক রীতিমত স্পিন খেতে খেতে লিফটে উঠে পরলেন। ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইটের কমপ্লিমেন্টারি ড্রিঙ্কসের প্রভাব হয়ত। এক বয়স্ক ভদ্রলোক এসে রেজিস্ট্রেশনের বিশয়ে সাহায্য চাইতেই হিমানের ব্যস্ততা-সূচক চড়তে লাগল। জানতে পারলাম উনি প্রখ্যাত সাংবাদিক রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা শহরতলীর ট্রেনে নিত্য যাতায়াতের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি যেভাবে উনি তিন কলামের চটুল গল্পের সাহায্যে সান্ধ্য প্রতিদিনের বিক্রি বাড়িয়ে তুলেছেন, তা হ্যারি পটারের লেখিকার চেয়ে কম কৃতিত্বের নয়।
সন্ধ্যা ঘনাতেই বিজনেস ফোরামের ককটেল পার্টিতে মহারথীদের ভিড় বাড়তে লাগল। হিমান মহারাজও ওয়াইনের কৃপায় বেশ ফুরফুরে মেজাজে। হিল্টনের বাইরের অঘোষিত স্মোকিং জোনে হিমান উপলব্ধি করল যে কলকাতাবাসীদের সাথে ওর আলাপ করা উচিত। সামনেই ছিলেন তবলাবাজিয়ে তন্ময় বোস। অতএব তার কাঁধ ঝাঁকিয়ে হিমান বলে উঠল - Hey! Let's mingle! তবলায় চাটি মেরে যার অভ্যেস, কাঁধে হিমানের চাটা খেয়ে তিনি বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়লেন। আধা বাংলা ও আধা ইংরাজিতে যা বললেন তার সারাংশ হল যে উনি মোটেই Mingleবাজ নন। মনমরা হিমান তবলচির এই প্রতিবাদ হজম করার জন্য পুনরায় বারের দিকেই রওনা দিল।
পেটের ভিতর একটা অস্বস্তিতে টনক নড়ল। ঘড়ির কাঁটায় খিদে উঁকি মারছে। বুঝলাম বাংলার কমরেডদের সাথে এদের তফাত কোথায়। ব্রিগেডের সভায় অন্তত সিঙ্গারা লাড্ডুর প্যাকেট জোটে। এখানে শুধুই কিছু 'প্রবাসী' সঙ এর অ্যাক্সেন্ট। ততক্ষণে গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট। আগামী তিন দিন যে কেউ এই গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন। কনভেনশন সেন্টারের রাক্ষুসে পার্কিং চার্জ মিটিয়ে রওনা দিলাম বাড়ির পথে। মনের মধ্যে তখন কমপ্লেক্স সুডোকু - পালাবার এখনো কি কোনো রাস্তা আছে? কানের পাশে কোনো এক অ্যাংরি ইয়ংম্যান যেন বলে উঠল - 'NABC সে বচ্না মুশকিল হি নহী, নামুমকিন হ্যায়'।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Anirban Bhalo hochche keep it up
ReplyDeletecontent barao
Daruun.. amaro mot holo contenet barao.
ReplyDeleteAngiradi