Saturday, April 14, 2012

বাজে বকা

মাঝে মাঝে মনে হয়, দিনের যতটা সময় বাজে বকে কাটাই, তার কিছুটা যদি সেগুলিকে লিপিবদ্ধ করাতে কাটাতাম ... বেশ হত। আজ থেকে কয়েক হাজার বছর পরে কিছু বেকার ঐতিহাসিক যখন আমাদের ফেসবুক সভ্যতার ধ্বংসাবশেষের সাথে সেই দুর্বোধ্য লিপি পাঠোধ্যারের চেষ্টা করবে, বা কিছুটা লড়াইয়ের পর হাত তুলে দেবে, স্বর্গ বা নরকে আলসেমিভরে তা উপভোগ করতে খারাপ লাগবে না। স্বর্গ না নরক? কেন এই দ্বিধা? আজকাল নেত্রী বলছেন যে সবটাই সাজানো, ঠিক চেনা যাবেনা।

এটা উইকিপিডিয়া নয়। তাই বাজে বকার ব্যাপারে আর্টিক্‌ল ধরে ধরে তার ব্যাখ্যা, জন্মসাল, ব্যক্তিগত নষ্টামির হিসেব দিতে আমি দায়বদ্ধ নই। তেমনি আমি দায়বদ্ধ নই তাদের কাছে ক্ষমা চাইতে, যাদের ক্রিয়াকর্মাদিকে খোরাকরূপে চিহ্নিত করে এক অনাবিল হাস্যরসের উৎস হিসেবে গণ্য করেছি। আজকাল তো উদাহরণ না দিলে বক্তব্য দাঁড়ায় না। কদিন আগেই ফেসবুকে দেখলাম জনৈক ব্যক্তি একটি ঘোষণা করেছেন, যার বাংলা তর্জমা করলে হয় - আজ আমি এক পুত্রসন্তানের গর্বিত পিতা হলাম। এক সদ্যজাত শিশুর কোন কীর্তিতে যে তার বাবা গর্বিত হল, তা বোঝা বেশ কঠিন। সে কোন পরীক্ষায় প্রথমও হয়নি, স্পোর্ট্‌সে মেডেলও জেতেনি বা ঢিল ছুড়ে কারুর মাথাও ফাটায়নি। সে ও তার পত্নী যে ফলনশীল, সে ছাড়া আর কোন গর্বের বিষয় খুঁজে পেলাম না। যাই হোক, এই ধরণের বিবৃতির অনুপস্থিতিতে বাজে বকাটাও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

আজকাল অবশ্য বাজে বকা নিয়ে চর্চা করার প্রচুর সময়। প্রযুক্তির আশীর্বাদে ও রিসেশনের ধাক্কায় আনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ কমেছে। যেমন নববর্ষ বা বিজয়ার অনাবশ্যক এস্‌এম্‌এস্‌ মোবাইলের ইনবক্স থেকে মুছতে হয় না। তারা আজকাল সময়ের বিবর্তনে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে বাসা বেধেছে। ঘন্টার পর ঘন্টা বসে দেবদাসদের দুঃখের কাহিনী শুনে সান্ত্বনাও দিতে হয় না। তারা আজকাল স্বাবলম্বী হয়েছে। দু ঢোঁক গিলে, দু কলম দেবদাসী স্ট্যাটাস পোস্ট করে, কয়েকটা লাইক কুড়িয়েই তারা আজ বেশ খুশি।

এই বাজে বকা অবশ্যই মুড্‌কেন্দ্রিক। ছোট গল্প যেমন শেষ হয় না, এটা আবার মুড পাল্টালে হঠাৎ করে শেষ হয়ে যায়। হ্যাঁ, ঠিকই বুঝেছেন। আজকের যন্ত্রণার এখানেই ইতি। লেকিন জানে সে পেহ্‌লে ... শুভ নববর্ষ ১৪১৯।